কবি কুট্টি রেবতী’র জন্ম ১৯৭৪ সালে। এটি তাঁর ছদ্মনাম। কবিতা লেখেন তামিল ভাষায়। বর্তমানে চেন্নাইতে থাকেন। প্রথম কবিতার বই ‘লাইট প্রাউলস লাইক এ ক্যাট’ (২০০০)। এরপরে প্রকাশিত হয় ‘ব্রেস্টস’ (২০০২), ‘ওয়ান থাউজ়েণ্ড উইংস অফ সলিটিয়ুড’ (২০০৩), ‘বডিজ় ডোর’ (২০০৭), ‘শ্যাটারড বাউন্ডারিজ়’ (২০১২)। সম্পাদনা করেন ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘পানিক্কুদাম’ (Embryonic Sack)। তামিল ভাষায় এটিই প্রথম ফেমিনিস্ট পত্রিকা। গবেষণা করেছেন মেডিক্যাল অ্যানথ্রোপোলজি নিয়ে।
২০০২ সালে তাঁর দ্বিতীয় বই ‘ব্রেস্টস’ প্রকাশিত হলে রক্ষণশীল তামিল সাহিত্য প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে তুমুল প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কিন্তু সাংস্কৃতিক পরিসীমার ভেতরেই সে-বিতর্ক থেমে থাকে না। নোংরা ফোন কল, চিঠি, হুমকি এসবও আসতে থাকে। লেখকের মরালিটি ও সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশান নিয়ে মন্তব্য চলতে থাকে চারপাশে। তামিল সিনেমার কিছু গীতিকার তাঁর মতো লেখকদেরকে প্রকাশ্যে চড় মারার দাবি জানায়। কেউ কেউ দাবি করেন চেন্নাই মাউন্ট রোডে এঁদেরকে পুড়িয়ে মারার।
২০০৬-এ ‘Weaving the Body with Words’ শীর্ষক একটি সাক্ষাৎকারে কবি বলছেন : ‘Poetry… demands an endless
enquiry into the self, and endless cycles of the self’s destruction and renewal
[…] People always ask me why I do not write poems about societal concern and
issues, as though attempts to bring about inner renewal and inner
transformation were not acts of social concern. I use my language only to
loosen the fetters that have bound and shrunk a woman’s body.’
আমরা কেউ দেবদূত নই
১.
সোজা দাঁড়িয়ে আছে গাছগুলো
হাওয়া-টাওয়া নেই
এলোমেলো পাখিরাও
মেঘ, পাখিরই প্রজাতি এক
উড়ছে, ডানা নেই
ঠিক যখন বৃষ্টি নামার সময়—
ঘোড়াগুলো আছে দৌড়ের নিয়ত চর্চায়
চোখ থেকে চোখ
তার মন্ত্র
আঙুরের মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির রং
থৈ জল আর দাপিয়ে ছুটে গেল
বৃষ্টির কাছে যেন অচেনা ঘোড়া
আর বৃষ্টির স্তূপ নিয়ে ডুবে যাচ্ছে ধাঙড়
যেন শরীর বোনার কোনো ঋতু নেই জগতে কোথাও
২.
গরম নিঃশ্বাসে যখন বরফ গলতে থাকে
তখন তার চোখের দিকে চেয়ো
যেন ঝরনার ঠোঁট ফাঁক আর
বইছে
আর সন্ধ্যেয়
শরীর আবার
আবার পরেছে আগুনের মালা
সে তো ভেঙেই পড়েছিল সকালে
যে সকাল তোমাকে বললো, এসো
যে সকাল ঘুরঘুর করে গেছে তোমার
আশেপাশে
প্রশ্বাসের আনাচে কিনারে
মরে যাওয়ার পরাগ গন্ধে
আর ভারী মুষল বৃষ্টিতে,
কাটা ডালের মতো যে ভেঙে পড়েছিল তোমার মাথায়
তারপর জোরে ছুঁড়ে দেওয়া তাকে দূরের মাঠে,
যেভাবে চাকা ঘুরে যায় চাকার ভেতর
জীবনের চোখ দুটো গুটোনো সারাৎসারে
৫.
অনেক অনেক বছর আগে বীজ ফুটে চারা বেরিয়ে এসেছিল,
আর শরীরের কালো চকচকে মাটিতে মুকুল ছড়ালো মেঘ
ছিলা টানটান মেয়েটার গায়ে যেন শরধি ওগুলো—
আর মাঝে মাঝেই মেয়েটা ভুলেই যেত সে-কথা
সন্ধ্যেয়, তার পাঁজরের কাছে
শাঁখের গম্ভীর
বৃষ্টির ফলা ঢুকে যায় ওর ভেতরে, আর তারা খুলে দেয় সব গিঁট
নেকড়ের দাঁত নিয়ে শরীর জুড়ে যে জাগছে তাকে কামনা বলে
বুকের শঙ্খেরা যদি কথা বলতো
বলতো হয়তো তার শরীরের প্রসব বেদনা
৬.
দিন ভেঙে দেয় রাতের মিছিল
যে তুমি গর্ভে নিয়েছো শব্দ, গর্ভে নেওয়ার ব্যথা
কারোর মন, কারোর আঙুল, ঠোঁট,
যে শব্দ ছোঁয়নি এখনো
অথচ শরীর চাইছে। ভীষণ চাইছে।
এরকম বৃষ্টির দিনে পুকুরে ভরে যায়
আকাশ থেকে নেমে আসা ছাই
বীজ ঢাকা থাকে তারই ফল দিয়ে
শিশুর আঙুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে প্রভেদ চিনে নেয়
চোখ, চুল, আর ফুল ও পাতার
শেকড় যেভাবে মাটিকে আঁকড়ে—
বেঁধে রাখে ওরা দুটিতে শরীর
ওর টোপা গালে টোল এসে বসে,
ভয়ে জড়োসড়ো, আর ব্যথাগুলোর শেষ নেই
আমরা যারা নানান কাঁচের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছি নরম পানীয়
স্বাদে গন্ধে চেখে নিচ্ছি যার যার পৃথক স্মৃতিকে,
একা
ছাইরঙা পাখি
গাছের টাঙানো শামিয়ানায়
ছাইরঙা একটা পাখির মতো বসেই থাকে
গাছের ছায়া
যেন সে চায় কেউ তাকে তুলে নিয়ে যাক
রাস্তার এই বড় লম্বা শব্দহীনে
একটা মেয়ে আসে, নিচু হয়ে ঝাঁট দেয়
এটা সেই জায়গা
যেখানে কেউ আমাকে দাঁড়াতে বলেছে
ভালোবাসা চেয়েছে
ঝাড়ুদার মেয়েটা
চলে গেছে অনেকক্ষণ,
ঝাঁট দিয়ে নিয়ে গেছে রাস্তার স্তব্ধকে
যেতে যেতে বড় বড় চোখ করে ফিরে ফিরে সে দেখেছে আমাকে
এখন, অন্ধকার নেমে আসছে
চোখের জলের মতো। এখন মায়া আর ভয়।
যেন একটা শরীর শেষমেশ এবারে পৌঁছবে
নিজের প্র—ফুল্লে। আমি থাকি।
এখানে… অনেক অনেক দূর থেকে
তাকে হেঁটে আসতে দেখা যায়,
যেন জলবোঝাই মেঘ হাল্কা হতে আসছে
যেন প্রকৃত বৃষ্টি
এই অসহ্য আনন্দে
আর সব লালরঙের তারাগুলো আমার শরীরে লাফাতে থাকে
যদিও, গাছটা,
ঠায় দাঁড়িয়ে; একটুও না-ঘাবড়ে
ঠিক ছাইরঙা ঐ পাখিটার মতো
স্তন
বুদবুদ, এই মাই দুটো
যেন জলময় জলায় জেগেছে
সম্ভ্রমে আমি দেখি ওদের— নজরে নজরে রাখি—
ধীরে ধীরে ওদের ঢেউ ফুলে ওঠা আর
লালিমা আমার বসন্তের প্রান্তে
কাউকে তো কিচ্ছুটি বলে না,
একা একাই গান গায়
আমার সাথে একা,
গান, ভালোবাসার
গান পরমানন্দ আর বুক ভেঙে যাবার গান
যখন বড় হচ্ছি, নার্সারি,
আমাকে জাগাতে ভোলেনি ওরা
একবারও, সেই তখন থেকেই
ক্লাসে শাস্তির সময় ওরা ফুলে উঠতো
যেন আগল খুলে বেরোবার জন্য টানটান
আর কামনার হঠাৎ রাক্ষুসে টানে
যেন শূন্যে, উঁচুতে উড্ডীন,
ডেকে আনছে অপার অর্কেস্ট্রা
বুকে জড়িয়ে যখন পিষে দিয়েছে কেউ,
গ’লে গেছে ; আর পেট থেকে
অনাহূত শিশুর জন্ম, তার ধাক্কায় দুধ
যেন রক্তের প্রবাহে
না-সম্পূর্ণ প্রেম থেকে চোখের জলেরা
মোছা যাবে না,
তখন ওরা উথলে উঠেছে, দুঃখে
প্রবল চলকে পড়ছে ওরা